বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

মানবাধিকার ও হরতাল বিরোধিতার রাজনীতি



২০১২-০৪-২৬

১. 
মানুষকে ‘গুম’ করে ফেলার অপরাধ মানবাধিকারের চরম লংঘন। রাষ্ট্র নাগরিকদের রক্ষা করবার কথা, কিন্তু রাষ্ট্রই নাগরিকদের ‘গুম’ করে ফেলছে। যে ‘গুম’ হয়ে যাচ্ছে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না, কিম্বা কিছু দিন পর তার লাশ আবিষ্কৃত হচ্ছে। এই অপরাধের বিরুদ্ধে বিএনপির ডাকা হরতালের ইতিবাচক দিক হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষার লড়াই জাতীয় রাজনীতির বিষয়ে পরিণত হবার সম্ভাবনা এই প্রথম বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। হরতাল বা কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে যেভাবে চতুর্দিকে প্রচার চলছে সেই প্রচারের রাজনৈতিক চরিত্র বোঝা এখন একটা জরুরি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
‘গুম’ হয়ে যাওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার আনসারকে সরকার এখনও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় নি। প্রকাশ্যে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির তিন দিনের হরতালও সাময়িক শেষ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার আনসারকে তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য সরকারকে আগামি ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে মানুষ পুড়ে মরেছে, পুলিশের গুলিতে বিশ্বনাথে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কতজন তার হিশাব নাই। তা ছাড়া হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এই দুর্ভোগ সাধারণ মানুষকে পোহাতে হবে। সরকারকে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেই সময়সীমার মধ্যে ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারকে যদি পাওয়া না যায় তাহলে এরপর কী ঘটবে তা এখনই আন্দাজ করা কঠিন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত কোনো পরিবর্তন ঘটবার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। কারণ ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরেও সমাজে রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যে গুণগত পরিবর্তনের বিশেষ কোন লক্ষণ আমরা দেখছি না। রাষ্ট্রের যে গভীর অসুখ আমরা দেখছি তা নিরাময়ের পথ কী হতে পারে তা নিয়ে সমাজে বিশেষ কোন ভাবনাচিন্তা নাই। বরং হরতালের বিরোধিতাই দেখছি। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হরতাল বা কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরোধিতা করার অর্থ তাহলে আমাদের বিচার করে দেখা দরকার।
ঠিক যে মানবাধিকার রক্ষার লড়াই জাতীয় রাজনীতির বিষয়ে পরিণত হবে কি না সেটা আমরা বাংলাদেশের আগামি দিনগুলোতে দেখব। আমরা সম্ভাবনার কথা বলছি কেবল। এই লড়াইকে বিকশিত করা এবং তাতে নেতৃত্ব দেবার শক্তি ও যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছিÑ এই দাবি করা যাবে না বলেই শুধু সম্ভাবনার কথা বলা। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা দূরের কথা, মানবাধিকারের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সম্পর্ক কী এবং কেন মানবাধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গাঠনিক ভিত্তি সেই দিকগুলো আমাদের কাছে এখনো পরিচ্ছন্ন নয়। তবুও সম্ভাবনা দেখছি কেন? দেখছি এ কারণে যে এই সম্পর্ক বিচার নিছকই তত্ত্বগত ব্যাপার নয়, একটি দেশের জনগণ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই এই শিক্ষাটা অর্জন করতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচির গুরুত্ব এখানেই। যদি মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিচার আমাদের জাতীয় রাজনীতির বিষয় হয়ে ওঠে তাহলে রাজনীতি ও রাজনৈতিক চর্চার গুণগত রূপান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। 
যে সহজ সূত্র মনে রেখে আমরা আলোচনা করতে পারি তা হচ্ছে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং তা রক্ষা করবার কর্তব্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌল ভিত্তি। গণতন্ত্র সম্পর্কে এই অতি প্রাথমিক পাঠ আমাদের বিশেষ নাই বললেই চলে। গণতন্ত্র বলতে আমরা নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু বুঝি কি না সন্দেহ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রবিরোধী রাজনৈতিক দল ও শক্তি এই কারণে সাংবিধানিক ভাবে একনায়কতন্ত্র ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বহাল রেখে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের ওপর একনায়কী শাসন কায়েম করে রাখতে পারছে। কখনো সেনাপতিরা সামরিক কায়দায় আবার কখনো রাজনীতিবিদরা বেসামরিক কায়দায় গণতন্ত্রের আলখেল্লা গায়ে দিয়ে একনায়কতান্ত্রিক শাসন চালিয়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ফ্যাসিবাদের মধুর স্বাদও তারা আমাদের দিয়েছেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েমকেও আমরা এখন ‘গণতন্ত্র’ বলে থাকি। বাংলাদেশে কি এখন ‘গণতন্ত্র’ কায়েম নাই? আছে। কারণ আমরা ভোট দিয়েই তো সরকার গঠন করেছি। ধন্য দেশ!
তবুও আশা কেন? আশা এ কারণে যে আজ না হয় ইলিয়াস আলীর জন্য হরতাল ডাকা হয়েছে, কাল আমরা আজ অবধি যত মানুষ ‘গুম’ হয়েছে, তাদের সকলের জন্য সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা বোধ করতেও পারি। অন্তত বোধ করবার আশা করতে পারি। মানবাধিকারবিরোধী সব শ্রেণী ও শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবার রাজনৈতিক তাগিদ হয়তো আমরা উপলব্ধি করতে শিখব। কিন্তু সেটা শিখব মানবাধিকার কর্মী হিশাবে নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিশাবে। আর আশাটা ঠিক এখানেই।
রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি ও রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যক্তি নাগরিক হয়ে ওঠে। এই ভিত্তির ওপর রাষ্ট্রকে নতুন ভাবে গঠন করবার লড়াই হচ্ছে বাংলাদেশের এখনকার লড়াই। এটাই এখন গণতান্ত্রিক জনগণের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি। এই রাজনৈতিক উপলব্ধি সঞ্চার খুব সহজ কাজ নয়। অথচ একটু খোলা মনে চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব বাংলাদেশে আমরা যে রাষ্ট্রের অধীনে বাস করি সেই রাষ্ট্রে আমরা দাস, নাগরিক নেই। যে কোন নাগরিক এই রাষ্ট্রে ‘গুম’ হয়ে যেতে পারে। ‘গুম’ তো হয়ে যাচ্ছে। নাগরিকদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র বা সরকার চলে না, সেভাবে এই রাষ্ট্র বানানো হয় নি। চলে কতিপয় মাস্তান বা মাফিয়া গোছের সংগঠনের হুকুমে। অথচ তাদের আমরা রাজনৈতিক দল নামে অভিহিত করে আনন্দ বোধ করি। যখন কিছু দুর্বৃত্তের চরিত্র প্রকাশিত হতে শুরু করে তখন আমরা হৈচৈ শুরু করি। কিন্তু করি আরেক দঙ্গল দুর্বৃত্তকে ক্ষমতায় অভিষিক্ত করবার জন্য। তারপর যখন দেখি যাহা বাহান্ন তাহাই তেপান্ন, তখন বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করবার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি। তখন আবার নিজেকে নীতিনিষ্ঠ প্রমাণ করবার জন্য ঘোরতর ভাবে রাজনীতিবিরোধী হয়ে যাই। এখানেই শেষ না। অতঃপর রাজনীতি মাত্রই খারাপ এই গীত গেয়ে অন্যদেরও রাজনীতিবিমুখ করবার তৎপরতায় নেমে পড়ি। এই যখন আমাদের দুর্দশা তখন একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিন হরতাল পালন করা হয়েছে। সেটা কম কথা নয়। এটা তাৎপর্যপূর্ণ।

২.
তবে বিএনপি মানবাধিকার মর্যাদা বুঝে হরতাল ডেকেছে কি না সেটা বিএনপিকেই বোঝাতে হবে। সাধারণ ভাবে বাংলাদেশের সকল ‘গুম’ হয়ে যাওয়া নাগরিকদের পক্ষে এই হরতাল নয়, কিম্বা সাধারণ ভাবে ‘গুম’ বা সর্বপ্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেও এই হরতাল ডাকা হয় নি। ডাকা হয়েছে বিএনপিরই একজন নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার আনসারের জন্য। তবে অন্তত বিএনপি তার অন্যান্য দলীয় রাজনৈতিক ইস্যুর চাইতেও ‘গুম’ হবার কারণে হরতাল ডেকে মানবাধিকারকে রাজনৈতিক ভাবে তুলে ধরবার শর্ত তৈরি করেছে।
তবুও ইলিয়াস আলী ও আনসারের জন্য হরতাল ডাকার পক্ষে একদমই যুক্তি নাই, বলা যাবে না। একটি আশার ওপর সেই যুক্তি দাঁড়াতে পারে। এর আগে যারা ‘গুম’ হয়েছে তাদের হয়তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না, কিন্তু আশা আছে যে ইলিয়াস আলী এখনো জীবিত রয়েছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক অবশ্য জোর দিয়েই বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে ইলিয়াস আলী জীবিত। আইনজীবী হিশাবে তিনি সরকারের আরেকটি তৎপরতায় প্রচণ্ড ুব্ধ হয়েছেন। সেটা হোল ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে দশ বছর পুরানা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা। একটি লোক গুম হয়েছে পুলিশ জানে, কিন্তু এই মামলা গ্রহণ করা হোল কেন? এই সূত্র ধরেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটা ‘গুম’, নিখোঁজ নয়। কারণ এই নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার মধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। সরকার জানে, অথচ অস্বীকার করছে। ‘গুম’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশান অনুযায়ী এটা ‘গুম’ হবার ঘটনা। নিখোঁজ বা অন্তর্ধান নয়। ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তাদের নামে এই হরতালের যৌক্তিকতা তাহলে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। ঠিক যে মানবাধিকার বিএনপির হাতেও ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বারবার। আইনবহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে বিএনপির খ্যাতি আছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও নাই, বরং র‌্যাব গঠন করেছে বলে গর্ব আছে। এই সকল কারণে জনগণের বড় একটি অংশ ইলিয়াস আলী ‘গুম’ হওয়ায় বিুব্ধ হলেও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হরতালে অংশগ্রহণ করে নি বলে মনে হয়েছে। তবুও নিজ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার জন্য বিএনপি হরতালের কর্মসূচি দিলেও, যেহেতু এই কর্মসূচি ‘গুম’ হয়ে যাবার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছে, এই হরতালের রাজনৈতিক তাৎপর্য বিএনপির দলের সংকীর্ণ উদ্দেশ্যকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। হয়ে উঠেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
অতএব মানবাধিকারের মর্যাদা রক্ষার জায়গা থেকে এই হরতালকে সমর্থন না করবার কোনো রাজনৈতিক বা মানবিক যুক্তি থাকতে পারে না। কিন্তু শুরু থেকেই এই হরতালের বিরুদ্ধে একটা প্রবল বিরোধিতা আমরা লক্ষ্য করেছি। ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতার কথা আলাদা। বিরোধিতা করেছে সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের বড় একটি অংশ। বিরোধিতা করেছে সরকার সমর্থিত ও সংগঠিত ব্যবসায়ী শ্রেণি। বোঝা যাচ্ছে এই সরকারের বিরুদ্ধে কোন কঠোর কর্মসূচি তারা চায় না। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ব্যাপারটা তাদের কাছে বিএনপির একজন রাজনৈতিক নেতার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপার মাত্র। অন্য দিকে এমন অনেকেই আছেন যারা নীতিগত ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনবিরোধী তাদের বড় একটি অংশ এই হরতাল সমর্থন করে নি। তাদের বিরোধিতার যুক্তি হচ্ছে এই হরতাল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন আঠারো দল ডেকেছে, অতএব এ হরতাল সমর্থন করা মানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থন করা। সম্ভবত তারা একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির দলীয় উদ্দেশ্য আর বিশেষ পরিস্থিতিতে কর্মসূচির রাজনৈতিক তাৎপর্যের মধ্যে পার্থক্য করছে না। আমরা এই কারণে তাদের সঙ্গে একমত নই। কিন্তু হরতালের বিরোধিতা করে যারা প্রকারান্তরে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে এদের যেন আমরা একাকার না করে ফেলি।

৩.
বিএনপি যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে তখন বিএনপির উদ্দেশ্য একান্তই দলীয়। বিএনপি আগে এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক সেটাই চায়, কারণ তা না হলে নির্বাচনে কারচুপির এবং হেরে যাবার আশঙ্কা আছে তাদের। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন কারণ তা না হলে নির্বাচনে তার অসুবিধা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই পক্ষের কাছেই নির্বাচনী কৌশল মাত্র, তত্ত্বাবধায়ক তর্ক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কার বা মৌলিক গাঠনিক কোন তর্কের বিষয় নয়। সেই ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি সমর্থন করা দলীয় সমর্থনই বটে। কিন্তু কারো ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদের কর্মসূচির চরিত্র ভিন্ন। বিশেষত যখন ‘গুম’ হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে, তখন তা রাষ্ট্রের গুরুতর সঙ্কটের দিকে আমাদের নজর নিবদ্ধ করে। নিজের দলের কর্মীর ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপির দলীয় কর্মসূচিও তখন রাষ্ট্রের গাঠনিক চরিত্র নিয়ে আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। এটা পরিষ্কার যে ‘গুম’ হয়ে যাওয়া নিছক ফৌজদারি অপরাধের বিষয় নয়। রাষ্ট্রই এখানে অপরাধী। বিএনপি চাক বা না চাক ‘গুম’ হওয়ার বিরুদ্ধে যে কোন কর্মসূচি সমাজে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করবার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী করে এবং তা দলীয় সংকীর্ণ উদ্দেশ্য ছাড়িয়ে যায়। কিম্বা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এবারের হরতালের বৈশিষ্ট্য হোল কোন ইসলামী দলকে হরতালে বিশেষ ভাবে তৎপর দেখা যায় নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবার জন্য বিরোধী দল হরতাল ডেকেছে ক্ষমতাসীনরা এই অভিযোগ করলেও তাদের গলায় জোর ছিল না। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য হরতাল হচ্ছে এই যুক্তিতে হরতালের বিরোধিতা করা কঠিন। মানবাধিকারের প্রশ্নে সুস্পষ্ট অবস্থান থাকার পরেও বিএনপির ডাকা হরতালের পক্ষে থাকা না থাকা নিয়ে যারা দোদুল্যমানতা দেখিয়েছেন তাদের কথা আগে বলেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য এই হরতাল এই যুক্তি তাদেরও থাকতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এর কোন ভিত্তি নাই। এই পরিস্থিতিতে হরতাল প্রশ্নে অবস্থানহীনতা রাজনীতিহীনতারই সমার্থক। এতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রাম এগিয়ে যাবে না, বরং পিছিয়ে পড়বে।
অবস্থান নেবার মানে এই নয় যে বিএনপির পাশাপাশি হরতালের কর্মসূচি দিতে হবে। মোটেও না। হরতালে অংশগ্রহণের কথাও বলছি না। বরং বলছি এই বিশেষ ইস্যুতে হরতালের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। যত নির্বাক বা আড়ালেই থাকি না কোন কোন ইস্যুতে আমরা কী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি তা সমাজের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার নির্ণায়কও বটে। সেই কারণে কথাগুলো বলে রাখা দরকার।

৪.
কিন্তু নানা অজুহাতে যারা হরতালের বিরোধিতা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে তারা আসলে বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট শক্তি ও মানবিক অধিকারবিরোধী অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখবার জন্যই হরতালের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কর্মসূচির আগে থেকেই প্রচার চালিয়ে আসছে তারা এবং এখনো প্রচার চালাচ্ছে। এই প্রচার আরো জোরেশোরেই চলবে। তারা সচেতন ভাবেই অর্থনৈতিক দুর্ভোগের কথা বলে ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দমন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করবার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নিরন্তর মতাদর্শিক বয়ান ও যুক্তি তৈরি করছে। এটাই এবারের হরতালের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং দিক। হরতাল চাই না, হরতাল ভালো না, হরতাল খারাপÑ এই কেচ্ছা অনবরত শুনতে হচ্ছে আমাদের। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান দুষমন হিশাবে এই ধারার তৎপরতা হরতালের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে খুব স্পষ্ট ভাবেই ফুটে উঠছে।

‘গুম’ করছে রাষ্ট্র তার পরেও এবারের হরতালের বিপক্ষে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি ও শক্তি যেসব যুক্তি হাজির করছে সেটাই বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন উপাদান। বিএনপি ও তার অধীনে জোটভুক্ত দলের রাজনীতির বিরোধিতা দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদের সমর্থক শ্রেণি ও শক্তিকে এখন চিনব না। ক্ষমতাসীন মহাজোটকে প্রকাশ্যে তারা সমর্থনও করতে পারছে না। গত কয়েক বছরে তাদের শাসনের যে নমুনা দেখেছে মানুষ তার জন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রকাশ্যে দাঁড়ানো মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিরোধী শ্রেণি ও শক্তিগুলোর পক্ষে এখন কঠিন হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার পথ কী? ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন কঠিন কর্মসূচিÑ বিশেষত হরতালের বিরোধিতা করা। ফ্যাসিবাদের পক্ষের শ্রেণি ও শক্তি ঠিক এই পথটাই বেছে নিয়েছে। তারা হরতালের প্রাণপণ বিরোধিতা করছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের শ্রেণি ও শক্তিকে এখন তাহলে চিনতে হবে তাদের অতিরিক্ত হরতাল বিরোধিতার মধ্যে।
হরতালের বিরোধিতার যুক্তির অভাব নাই। তিন দিনের হরতালে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন। সহিংসতা ঘটেছে, সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, জনগণকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই সময়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে হয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরপর তিন দিনের হরতালে ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। এসব অভিযোগ সত্য কোন সন্দেহ নাই। তাহলে তো সামরিক শাসক এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ লড়াই সংগ্রাম করে জান ও মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি ঘটিয়েছিল তা খুবই ভুল কাজ ছিল। এরশাদ ছিল সামরিক সৈরশাসক, তার কোন গণসমর্থন ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণকে এখন লড়তে হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে, শুধু সরকারও নয় ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। স্বৈরশাসনের সাথে তার মৌলিক তফাত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বিপুল গণসমর্থন থাকে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শ্রেণি ও শক্তির জন্য এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।

ফ্যাসিবাদের পক্ষে দ্বিতীয় যে যুক্তি দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বার্থের যুক্তি। বলা হচ্ছে হরতালে নাগরিকদের নিজেদের এবং সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে। অতএব, রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম করা যাবে না। মানবিক অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাক্সা এবং তার পক্ষে রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশগ্রহণের বিপরীতে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থকে বারবার মুখ্য করে তোলা হচ্ছে। তুলবে। মানুষের ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার কথা বলে তার সামষ্টিক রাজনৈতিক স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়ার তুমুল প্রচারণা চলছে। পত্রপত্রিকায় টেলিভিশানে মানুষ কিভাবে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই দিকটাকেই প্রচারের মুখ্য বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। হরতাল যে কতো খারাপ জিনিস তা প্রমাণের ধুম পড়ে গিয়েছে। যার নজির আমরা যে কোন পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশানে দেখতে পারব। 

প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের ক্ষতি হবে না বা হরতালে মানুষের দুর্গতি হচ্ছে না তা নয়। যে কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে ত্যাগ থাকে মানুষের। ব্যক্তিস্বার্থকে সমষ্টির স্বার্থের অধীনে নিয়ে আসার মধ্য দিয়েই রাজনীতি সমষ্টির স্বার্থ হয়ে ওঠে। সমাজে ব্যক্তি হিশাবে আমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির নিরন্তর অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা চলে। সমাজে আমরা এক নই, অনেক। ব্যক্তির কাছে অন্য সব ব্যক্তি বা সমাজ নিজ নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের উপায় মাত্র। কিন্তু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আমরা ব্যক্তির স্বার্থ নয়, সমষ্টি স্বার্থের জন্য সংগ্রাম করি। বলাবাহুল্য, দলবাজি নিয়ে কথা বলছি না আমরা। দলবাজিকে যেন আমরা রাজনীতি বলে ভুল না করি। সমাজে ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যক্তি আলাদা, পৃথক, অসম, বিভিন্ন, বিচিত্র ইত্যাদি। কিন্তু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আমরা ‘এক’ হয়ে যাই বা সকলের রাজনৈতিক সত্তা সমান এই সত্য মানি ও তা উপলব্ধির চেষ্টা করি। বাংলাদেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তারা ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে সমষ্টির মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি করেছিলেন। ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার যে রাজনীতি সেই রাজনীতি শুধু আমার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করে না, নাগরিক হিশাবে সকলের অধিকার রক্ষা করে। রাজনীতি বা রাজনৈতিক সমাজ হচ্ছে সেই পরিমণ্ডল যেখানে সবার জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করা সম্ভব। কিন্তু ফ্যাসিবাদ এখন এই সম্পর্ককেই উল্টিয়ে দিতে চাইছে। মানবাধিকার আদায় ও রক্ষার জন্য কঠোর কোন আন্দোলন-সংগ্রাম করা যাবে না। কোন হরতাল করা যাবে না। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। ব্যক্তি স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থকে রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থাপন করে বাংলাদেশী ফ্যাসিবাদ বিদ্যমান রাষ্ট্রকেই শুধু টিকিয়ে রাখতে চাইছে না, একই সাথে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও টিকিয়ে রাখতে চাইছে। ফ্যাসিবাদ বলতে চায়, রাজনৈতিক মুক্তির দরকার নাই, তার জন্য লড়াই-সংগ্রাম আত্মত্যাগ মূল্যহীন, অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষাই আমাদের প্রধান ও একমাত্র কর্তব্য। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সম্পর্ক উল্টিয়ে দেবার সাফল্যের মাত্রাই ফ্যাসিবাদের আগামি দিনে টিকে থাকা না থাকা নির্ণয় করবে। সামষ্টিক রাজনৈতিক স্বার্থকে অস্বীকার করবার জন্য ব্যক্তি স্বার্থকেই বাংলাদেশী ফ্যাসিবাদ মহিমান্বিত করে তুলবে। ফ্যাসিবাদের পক্ষে প্রচারের এই ধরনই বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সবচেয়ে বিপজ্জনক। 

আইনবহির্ভূত হত্যা, মানুষ ‘গুম’ করে ফেলা ইত্যাদি অপরাধ বন্ধ করবার জন্য অনেকে রাষ্ট্র যেমন আছে তেমনি র‌্যাব বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিলুপ্ত করে দেবার প্রস্তাব দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা হিউমেন রাইটস ওয়াচ এই প্রস্তাব দিয়ে আসছে অনেক দিন আগে থেকেই। রাষ্ট্রের কোন সংস্থা দানব হয়ে উঠলে তাকে বিলুপ্ত করা একটা দাবি হতেই পারে, যে কোন অসুখের বাহ্যিক উপসর্গেরও বিধান দরকার। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের গাঠনিক অসুখ সারবে না এটা নিশ্চিত বলা যায়। আরেকটি সংস্থা বানাবে বর্তমান মানবাধিকার বিরোধী অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সেটাও অচিরে আবার দানব হয়ে উঠবে। সমাজে রাজনৈতিক চিন্তার গুণগত পরিবর্তনের লক্ষণ অসুখের বাহ্যিক চিকিৎসায় প্রস্তাবে নাই। নিদেনপক্ষে মানবাধিকার রক্ষার সঙ্গে রাষ্ট্রের গাঠনিক সম্পর্ক নিয়ে যে ন্যূনতম উদ্বেগ সমাজে তৈরি হবার কথা, সমাজে তা অনুপস্থিত। ফলে বিনা বিচারে আটক ও নির্যাতন, দৈহিক ভাবে আটক ব্যক্তিকে অমানুষিক ভাবে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায়, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, আইনবহির্ভূত হত্যা, ‘গুম’ হয়ে যাওয়া ইত্যাদির হাত থেকে আমরা অচিরে নিস্তার পাব এমন আশা করা কঠিন। সঙ্ঘাত, রক্তপাত, দমন-পীড়নের অসহনীয় অত্যাচার তো আছেই। দলীয় মাস্তানির কুৎসিত বলয়ের মধ্যে আমাদের আরো কত দিন ঘুরপাক খেতে হবে কে জানে। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে একা দায়ী করে নিজেদের পাপ লাঘব করা সহজ। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক নিয়ে সমাজে চিন্তাচেতনার অনাগ্রহ এবং অভাবের দিকেও আমাদের নজর ফেরাতে হবে। এই অনাগ্রহ ও অভাবের কথা মনে রেখেই একটি মানবাধিকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে তিনদিনের হরতাল পালন ইতিবাচক। হরতালের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী শ্রেণি ও শক্তির প্রচারণার জবাব দেওয়ার জন্য এই কথা জোরের সঙ্গে এখন বলা দরকার। 
ঠিক যে হরতালের কর্মসূচি বিএনপির। কিন্তু রাজনীতি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ব্যাপর মাত্র নয়। একদা একটি আদর্শ রাজনৈতিক দল আকাশ থেকে নেমে আসবে এবং সেই দল আমাদের মুক্তি দেবে, তারপর সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবেÑ এই ধরনের আধ্যাত্মিক চিন্তায় মগ্ন থেকে রাজনীতি ও রাজনৈতিক তৎপরতার প্রতি বিমুখ থাকা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে খেটে খাওয়া শ্রেণির রাজনীতির দুর্বলতার কারণে এই প্রকার আধ্যাত্মিক প্রবণতা বেড়েছে। যদি আমরা রাজনীতি বা রাজনৈতিক তৎপরতার বিমুখ হয়ে পড়ি তাহলে ফেরেশতা এসেও আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না। রাজনৈতিক আধ্যাত্মিকতা ক্ষতি ছাড়া কোন জনগোষ্ঠির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে নি। আজ রাজনৈতিক আধ্যাত্মিকতাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাধা হয়ে উঠেছে। এই আধ্যাত্মিকতার ধারকরা বিদ্যমান দুই রাজনৈতিক পক্ষের দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির নজির টেনে রাজনীতি থেকে জনগণকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশগ্রহণ থেকে জনগণকে নিরুৎসাহিত করছে। 
আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করা। রাজনীতির কোন ইস্যু দলীয় স্বার্থ রক্ষা করে এবং কোন ইস্যু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে জড়িত নিদেনপক্ষে এই ভেদবুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর প্রাথমিক কাজগুলো তো আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। নয় কি? 
২৫ এপ্রিল ২০১২। ১২ বৈশাখ ১৪১৯। শ্যামলী।
farhadmazhar@hotmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন